পোলাও! নামটা শুনলেই জিভে জল, তাই না? বিয়েবাড়ি হোক বা ঘরোয়া অনুষ্ঠান, পোলাওয়ের কদর কিন্তু সবসময়ই তুঙ্গে। কিন্তু অনেকেই ভাবেন, পারফেক্ট পোলাও রান্না করা বেশ কঠিন। একদমই না! আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব এমন একটা পোলাও রান্নার রেসিপি, যেটা ফলো করলে আপনিও হয়ে উঠবেন পোলাও এক্সপার্ট! তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
পোলাও রান্নার প্রস্তুতি: উপকরণ ও সরঞ্জাম
পোলাওয়ের আসল স্বাদ নির্ভর করে উপকরণের ওপর। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিন আগে।
উপকরণ তালিকা
- বাসমতী চাল – ২ কাপ (ভালো মানের বাসমতী চাল পোলাওয়ের জন্য সেরা)
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি (বড়)
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ (এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ)
- ঘি – ২ টেবিল চামচ (ঘি পোলাওয়ের স্বাদ বাড়ায়)
- সাদা তেল – ১ টেবিল চামচ
- কাজুবাদাম – ১০-১২টি
- কিশমিশ – ১০-১২টি
- কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি (স্বাদমতো)
- নুন – স্বাদমতো
- চিনি – ১/২ চা চামচ (স্বাদ বাড়াতে)
- জল – ৪ কাপ (চালের দ্বিগুণ)
- এলাচ – ৩-৪টি
- দারুচিনি – ২-৩টি ছোট টুকরা
- লবঙ্গ – ৪-৫টি
- তেজপাতা – ২টি
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
- প্যান বা হাঁড়ি (যেখানে পোলাও রান্না করবেন)
- মাপার কাপ
- চামচ
- ঢাকনা
পোলাও রান্নার সহজ রেসিপি
এবার আসি আসল রান্নার পদ্ধতিতে। স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করুন, আর দেখুন কেমন ঝরঝরে পোলাও তৈরি হয়!
প্রথম ধাপ: চাল ধোয়া ও ভেজানো
- প্রথমে বাসমতী চাল ভালো করে ২-৩ বার ধুয়ে নিন। এতে চালের অতিরিক্ত স্টার্চ ধুয়ে যাবে।
- ধুয়ে যাওয়া চাল ৩০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখুন। এতে চাল নরম হবে এবং পোলাও ঝরঝরে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: মশলা তৈরি
- পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিন।
- আদা ও রসুন বেটে নিন অথবা রেডিমেড পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
- গরম মশলার গুঁড়ো তৈরি রাখুন। যদি গোটা গরম মশলা ব্যবহার করেন, তাহলে এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গ তৈরি রাখুন।
তৃতীয় ধাপ: রান্না শুরু
- প্যানে ঘি ও সাদা তেল গরম করুন। তেল সামান্য গরম হলে তাতে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ ও তেজপাতা দিন। একটু ভাজা হলে সুন্দর গন্ধ বের হবে।
- এবার পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা সোনালী করে ভেজে নিন।
- আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন, যতক্ষণ না কাঁচা গন্ধ চলে যায়।
- কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে হালকা করে ভেজে তুলে নিন।
চতুর্থ ধাপ: চাল ভাজা
- ভেজানো চাল থেকে জল ঝরিয়ে প্যানে দিন।
- চাল হালকা আঁচে ৫-৭ মিনিট ভাজুন। খেয়াল রাখবেন চাল যেন ভেঙে না যায়। চাল ভাজা হলে পোলাও ঝরঝরে হয়।
পঞ্চম ধাপ: জল ও মশলা মেশানো
- গরম জল (৪ কাপ) প্যানে ঢেলে দিন।
- নুন, চিনি ও গরম মশলার গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- কাঁচা লঙ্কা ফালি করে দিন (ইচ্ছা অনুযায়ী)।
ষষ্ঠ ধাপ: দমে বসানো
- প্যান ঢেকে দিন এবং আঁচ কমিয়ে দিন।
- ১৫-২০ মিনিট দমে রান্না করুন। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে আলতো হাতে নেড়ে দিন, যাতে পোলাও নিচে লেগে না যায়।
- যখন দেখবেন চাল সেদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে গেছে, তখন ভাজা কাজুবাদাম ও কিশমিশ উপরে ছড়িয়ে দিন।
- আরও ৫ মিনিটের জন্য দমে রাখুন।
সপ্তম ধাপ: পরিবেশন
- চুলা থেকে নামিয়ে আরও ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।
- আলতো হাতে পোলাও নেড়ে দিন, যাতে সবকিছু ভালোভাবে মিশে যায়।
- গরম গরম সুস্বাদু পোলাও পরিবেশন করুন মাংস, ডিম অথবা সবজির সাথে।
পোলাও রান্নার কিছু দরকারি টিপস
- সবসময় ভালো মানের বাসমতী চাল ব্যবহার করুন।
- চাল ধুয়ে অন্তত ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- চাল ভাজার সময় খেয়াল রাখুন, যেন ভেঙে না যায়।
- গরম জল ব্যবহার করলে পোলাও তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়।
- দমে রান্না করার সময় আঁচ কমিয়ে রাখুন।
- পরিবেশনের আগে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলে পোলাওয়ের স্বাদ আরও বাড়ে।
বিভিন্ন ধরনের পোলাও রেসিপি
পোলাও তো অনেক রকমের হয়, তাই না? চলুন, কয়েকটা জনপ্রিয় পোলাওয়ের রেসিপি দেখে নেওয়া যাক:
চিকেন পোলাও
চিকেন পোলাওয়ের স্বাদ অসাধারণ!
উপকরণ
- পোলাওয়ের চাল – ২ কাপ
- চিকেন (ছোট টুকরা) – ২৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
- ঘি – ২ টেবিল চামচ
- সাদা তেল – ১ টেবিল চামচ
- কাজুবাদাম ও কিশমিশ – পরিমাণ মতো
- নুন ও চিনি – স্বাদমতো
- জল – ৪ কাপ
- কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে চিকেন হালকা ভেজে তুলে নিন।
- এরপর পেঁয়াজ কুচি, আদা ও রসুন বাটা দিয়ে মশলা কষিয়ে চিকেন মিশিয়ে দিন।
- চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন।
- মশলার সাথে চাল মিশিয়ে জল ও নুন দিয়ে দিন।
- দম আঁচে ২০-২৫ মিনিট রান্না করুন।
- কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করুন।
ডিমের পোলাও
ডিমের পোলাও খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
উপকরণ
- পোলাওয়ের চাল – ২ কাপ
- ডিম – ২টি
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
- ঘি – ২ টেবিল চামচ
- সাদা তেল – ১ টেবিল চামচ
- নুন ও চিনি – স্বাদমতো
- জল – ৪ কাপ
- কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি
প্রস্তুত প্রণালী
- ডিম ফেটিয়ে নুন দিয়ে ভেজে ছোট টুকরা করে নিন।
- পেঁয়াজ কুচি ও অন্যান্য মশলা দিয়ে চালের সাথে মিশিয়ে জল দিন।
- দম আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন।
- ডিমের টুকরা দিয়ে পরিবেশন করুন।
সবজি পোলাও
যারা সবজি ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটা পারফেক্ট।
উপকরণ
- পোলাওয়ের চাল – ২ কাপ
- গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি (ছোট টুকরা) – ১ কাপ
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
- ঘি – ২ টেবিল চামচ
- সাদা তেল – ১ টেবিল চামচ
- নুন ও চিনি – স্বাদমতো
- জল – ৪ কাপ
- কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি
প্রস্তুত প্রণালী
- সবজি হালকা ভাপিয়ে নিন।
- পেঁয়াজ কুচি ও অন্যান্য মশলা দিয়ে চালের সাথে মিশিয়ে জল দিন।
- সবজি মিশিয়ে দম আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন।
- গরম গরম পরিবেশন করুন।
পোলাও নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
পোলাও নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। তাই কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া হলো:
পোলাও কেন ঝরঝরে হয় না?
পোলাও ঝরঝরে না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। চাল ভালো করে না ধোয়া, জলের পরিমাণ বেশি হওয়া, অথবা ঠিকমতো দমে না বসালে এমন হতে পারে।
পোলাও এর জন্য কোন চাল ভালো?
বাসমতী চাল পোলাওয়ের জন্য সেরা। এই চাল লম্বা এবং রান্নার পর ঝরঝরে হয়।
পোলাও এ কি কি মশলা ব্যবহার করা হয়?
পোলাওতে সাধারণত গরম মশলা (এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ), আদা, রসুন এবং কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করা হয়।
পোলাও কতক্ষণ দমে রাখতে হয়?
সাধারণত ১৫-২০ মিনিট দমে রাখলেই পোলাও ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে যায়।
পোলাও এর সাথে কি পরিবেশন করা যায়?
পোলাওয়ের সাথে মাংস, ডিম, সবজি, রায়তা অথবা যেকোনো ধরনের তরকারি পরিবেশন করা যায়।
পোলাও রান্নার সময় জলের পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত?
পোলাও রান্নার সময় জলের পরিমাণ চালের দ্বিগুণ হওয়া উচিত। যদি ২ কাপ চাল হয়, তাহলে ৪ কাপ জল দিতে হবে।
ঘি এর বদলে কি তেল ব্যবহার করা যায়?
ঘি এর বদলে সাদা তেল ব্যবহার করা যায়, তবে ঘিয়ের কারণে পোলাওয়ের স্বাদ বেশি ভালো হয়।
পোলাওকে আরও সুস্বাদু করার উপায় কি?
পোলাওকে আরও সুস্বাদু করতে কিছু জাফরান এবং গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।
পোলাও কি প্রেসার কুকারে রান্না করা যায়?
হ্যাঁ, প্রেসার কুকারে পোলাও রান্না করা যায়। তবে এতে পোলাও ঝরঝরে হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
পোলাও এবং বিরিয়ানির মধ্যে পার্থক্য কি?
পোলাও এবং বিরিয়ানির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো রান্নার পদ্ধতি এবং মশলার ব্যবহার। পোলাও সাধারণত হালকা মশলা দিয়ে রান্না করা হয়, যেখানে বিরিয়ানিতে অনেক বেশি মশলা এবং মাংস ব্যবহার করা হয়।
শেষ কথা
তাহলে দেখলেন তো, পোলাও রান্না করা কতোটা সহজ? শুধু কিছু টিপস আর সঠিক উপকরণ থাকলেই আপনিও হয়ে উঠতে পারেন পোলাও রান্নার মাস্টার। তাহলে আর দেরি কেন, আজই ট্রাই করুন আর পরিবারকে তাক লাগিয়ে দিন! আর হ্যাঁ, আপনার পোলাও কেমন হলো, সেটা কিন্তু জানাতে ভুলবেন না! শুভকামনা!