নাগরিক সনদের আবেদন প্রক্রিয়া জেনে আপনিও ঘরে বসেই নাগরিকত্ব সনদ পেয়ে যেতে পারেন। এজন্য আপনাকে সঠিক তথ্য ও নিয়ম জানতে হবে।
বেশিরভাগ সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে নাগরিকত্ব সনদও প্রয়োজন হয়। আমাদের কাছে এটি না থাকায় আমরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি।
তবে আপনি যদি জানেন নাগরিক সনদ কোথায় পাওয়া যায় এবং নাগরিক সনদ ডাউনলোড করতে হয় কিভাবে তাহলে হয়রানি না হয়েই সমাধান পেতে পারেন।
আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো অনলাইনে নাগরিক সনদ আবেদন করার নিয়ম। তার আগে জেনে নিব নাগরিক সনদ কি ও এই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তো চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আর সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ার অনুরোধ করছি।
নাগরিক সনদ কি?
নাগরিক সনদ হলো এমন একটি প্রামাণ্য দলিল যাতে কোনো ব্যক্তি জন্মগতভাবে কিংবা অন্য উপায়ে বাংলাদেশের নাগরিক সে সম্পর্কে উল্লেখ থাকে।
প্রতিটি দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকার এ দেশের নাগরিকদের বিভিন্নরকম সুবিধা ও পরিসেবা প্রদান করে থাকে।
এসব সুবিধা কিংবা পরিসেবা অন্য দেশের নাগরিক বা বিদেশি কেউ গ্রহণ করতে পারে না। তাই কাউকে উক্ত সেবাসমূহ পেতে হলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক সনদ দাখিল করতে হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সনদ
পূর্বে দেশে তথ্য প্রযুক্তির এত ব্যবহার না হওয়ায় দাপ্তরিক কাজের অধিকাংশ সম্পন্ন হতো এনালগ পদ্ধতিতে। সেরকম নাগরিক সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হতো।
কিন্তু বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির আশীর্বাদে এবং দেশে ব্যাপক উন্নয়নের কারণে এখন অনেক সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যায়। এমনকি ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব।
পূর্বের মতো ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সনদ পাওয়ার জন্য আর দিনের পর দিন চেয়ারম্যান কিংবা সচিবের শরনাপন্ন হতে হয় না।
আপনি খুব সহজেই মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন। ঘরে বসেই সেটি হাতে পেয়ে যাবেন অনেক কম সময়ে।
নাগরিকত্ব সনদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নাগরিক সনদ ডাউনলোড করতে আপনাকে প্রথমেই এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আর আবেদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা হলো:
- আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র
- একটি সচল বাংলাদেশি মোবাইল নাম্বার
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- আবেদনকারীর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
উপরের এসকল তথ্য কিংবা ডকুমেন্টস আপনার সংগ্রহে থাকলে আবেদনের জন্য এগোতে পারেন।
অনলাইনে নাগরিক সনদ আবেদন
নাগরিক সনদ কি এবং এ সম্পর্কিত অনেক তথ্য জেনেছি। এবার আসুন অনলাইনে কিভাবে নাগরিক সনদ আবেদন করতে হয় তা জানি।
এখানে আমরা প্রত্যেকটা কাজ ধাপে ধাপে উল্লেখ করেছি। এতে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। তবুও প্রথমবার পড়ার পরে না বুঝলে দ্বিতীয়বার পড়ার জন্য পরামর্শ দিবো।
ধাপ-১: সর্বপ্রথমে এই লিংকে ক্লিক করে প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য একটি সচল মোবাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার প্রয়োজন হবে।
তবে আপনার বয়স যদি ১৮ এর কম হয় কিংবা কোনো কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র না পেয়ে থাকেন তাহলে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়েও একাউন্ট রেজিস্ট্রার করা যাবে।
ধাপ-২: জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নাম্বার সঠিকভাবে লিখে ডানপাশের “নিবন্ধন করুন” বাটনে ক্লিক করলে আপনার ফোনে একটি OTP আসবে।
সঠিক ওটিপি লিখে “জমা দিন” বাটনে ক্লিক করলে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সফল হবে এবং ফোনে একটি মেসেজ আসবে যাতে User ID ও Password লেখা থাকবে।
ধাপ-৩: নাগরিক সনদ আবেদন এর এপর্যায়ে এই লিংকে ক্লিক করে মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টে লগিন করুন।
একাউন্টে লগিন করলে দেখতে পাবেন আপনার প্রোফাইল ২০% সম্পন্ন হয়েছে। অনলাইনে নাগরিক সনদ ডাউনলোড করার জন্য প্রোফাইলটি ১০০% সম্পন্ন করতে হবে।
প্রোফাইল আপডেট করতে “প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
এরপরে যথাক্রমে সাধারণ তথ্য, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ছবি প্রদান করলে প্রোফাইল ১০০% হয়ে যাবে।
“প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন” বাটনে ক্লিক করার পরে একটা ফর্ম আসবে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে লিখে সাবমিট করলেই হয়ে যাবে।
প্রোফাইল সম্পূর্ণ হলে আপনার প্রোফাইলটি দেখতে উপরের ছবির মতো হবে। আর যেহেতু ফর্মটি বেশ লম্বা তাই এখানে উল্লেখ করলাম না।
ধাপ-৪: এপর্যায়ে আপনি নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করতে এখানে ক্লিক করে ওয়েবসাইটের হোম পেইজে চলে আসবেন।
এরপরে আপনি যে সেবাটি নিতে চান তার উপরে ক্লিক করুন। আমরা যেহেতু নাগরিক সনদ ডাউনলোড করবো তাই “নাগরিকত্ব সনদ” অপশনে ক্লিক করছি।
এখানে ক্লিক করার পরে আমাদের সামনে উপরের ছবির মতো একটি পপ-আপ মেসেজ দেখাবে। এখানে “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করলে আপনার বর্তমান বা স্থায়ী ঠিকানায় আবেদনটি দাখিল করা হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমানে অর্থাৎ এই ব্লগটি যখন প্রকাশ করা হচ্ছে তখন পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ১১৪৬টি ইউনিয়নে অনলাইনের মাধ্যমে নাগরিক সনদ আবেদন করা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে যদি আপনার ইউনিয়নে প্রত্যয়ন ওয়েবসাইটের অনলাইন সেবা যুক্ত না থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভায় গিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে।
অনলাইনে নাগরিক সনদ ডাউনলোড
এখনও পর্যন্ত এই সেবাটি চালু হয়নি। অর্থাৎ আপনি অনলাইন থেকে সরাসরি নাগরিক সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন না।
আবেদন সফলভাবে দাখিল করা হয়ে গেলে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে। নাগরিকত্ব সনদে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সচিবের সীল, সাক্ষর যুক্ত করা থাকে।
নাগরিক সনদ যাচাই
এতক্ষনে জেনে গেছেন নাগরিক সনদ কি এবং কিভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই সনদ হাতে পাওয়ার পরে নাগরিক সনদ যাচাই করে দেখতে চাই এটা আসল কিনা।
তাদের জন্য প্রত্যয়ন সাইটে এই সুবিধা যুক্ত করা আছে। নাগরিক সনদ যাচাই করতে এই লিংকে গিয়ে আবেদন আইডি অথবা সনদ নং লিখে ডানপাশের “যাচাই করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: আসল NID কার্ড যাচাই করবেন যেভাবে
নাগরিক সনদ আবেদন সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
এবার আসুন আজকের টপিক সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই। অনেকেই ইন্টারনেটে এসব প্রশ্ন করে থাকেন। আমরা এমন বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
১. নাগরিক সনদ কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তরঃ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা অফিসে নাগরিক সনদ পাওয়া যায়।
২. নাগরিক সনদের মেয়াদ কতদিন?
উত্তরঃ নাগরিক সনদের মেয়াদ আজীবন। এটি একবার তৈরি করলে নষ্ট বা হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যায়।
৩. নাগরিক সনদ নিতে কত টাকা লাগে?
উত্তরঃ ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভা ভেদে এই ফি ভিন্ন হয়ে থাকে, এর নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ নেই। নাগরিক সনদ নিতে স্থানভেদে ১০০-৫০০ টাকা লাগে।
৪. চারিত্রিক সনদ কে কে দিতে পারে?
উত্তরঃ স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ চেয়ারম্যানে ও মেম্বার চারিত্রিক সনদ দিতে পারে।
৫. নাগরিক সনদের কাজ কি?
উত্তরঃ নাগরিক সনদের কাজ হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রত্যয়ন করা যে আপনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা।
সুন্দর ভাবে বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।