আপনারা যারা অপ্রয়োজনে TIN রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা অনেকেই এই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম জানতে চান।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে TIN Certificate সংক্রান্ত নতুন আইন প্রস্তাবের ফলে টিনধারী অনেকের মাঝে এটি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
এই অর্থবছরের একটি গেজেটে এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছিল যে, যাদের বার্ষিক আয় করযোগ্য আয়সীমার নিচে তাদেরকে প্রতি বছর ২০০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
এটা নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা তৈরি হয়। সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে এমন আইন বাতিল করা হয়।
ফলে এখন যাদের টিন সার্টিফিকেট রয়েছে কিন্তু বার্ষিক আয় করযোগ্য আয়ের নিচে তাদের ২০০০ টাকা দিতে হবে না। তবে প্রতি অর্থবছরে জিরো রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
জিরো রিটার্ন জমা দেওয়া অনেকের জন্যই ঝামেলাপূর্ণ। তাই আপনি যদি জানতে চান কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে হয় তাহলে পুরো ব্লগটি পড়ুন।
আজকের ব্লগে আমরা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম ২০২৪ সহ, টিন সার্টিফিকেট বাতিলের শর্তাবলি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। এছাড়া এটি বাতিল না করার কিছু যৌক্তিক কারও জানবো।
টিন সার্টিফিকেট বলতে কি বুঝায়?
TIN এর পূর্ণরূপ হলো Taxpayer Identification Number. এটি পূর্ণনাম থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে টিন হলো বাংলাদেশের করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর।
টিন সার্টিফিকেট হলো এমন একটি সনদ যেটি করদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ও করসংক্রান্ত তথ্য বহন করে। নাগরিকদের যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে, তেমনি করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের TIN থাকে।
এই সনদে ১২ ডিজিটের একটি ইউনিক নম্বর থাকে যেটাকে TIN বা করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বলে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার শর্তাবলি
৪৪টি সরকারি সেবা গ্রহণ করতে গেলে আপনার একটি বৈধ টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এসব সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে: জমি রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয়, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি ইত্যাদি।
কিন্তু আপনি যদি মনে করেন এই ৪৪টি সেবা আপনার কখনও প্রয়োজন হবে না তাহলে টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
তবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আপনার কিছু শর্তাবলি মানতে হবে। অর্থাৎ নিচে উল্লিখিত যেকোনো একটি কারণে টিন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।
- করদাতা ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে বা নিরুদ্দেশ হলে
- করদাতা ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করে অন্যদেশের নাগরিক হলে
- টিন সার্টিফিকেটে ব্যক্তিগত তথ্য ভুল থাকলে বা একই ব্যক্তির একাধিক টিন থাকলে
- করদাতা ব্যক্তির আইনি মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে
- বার্ষিক আয় করযোগ্য আয়সীমার নিচে হলে
উপরের যেকোনো একটি কারণে একজন তার টিন সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে করযোগ্য আয়সীমা হচ্ছে-
- সাধারণ ব্যক্তির জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা
- মহিলা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তির জন্য ৪ লাখ টাকা
- প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তির জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা
- গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা
উ উল্লিখিত ব্যক্তিদের বাৎসরিক আয় যদি উক্ত টাকার কম হয় তাহলে তাদেরকে কর প্রদান করতে হবে না।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
TIN Certificate বাতিল করার নিয়ম জানার পূর্বে চলুন জেনে নিই আবেদন করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে।
এখানে বেশিকিছু দরকার নেই। শুধু টিন নম্বরধারী ব্যক্তির ১. জাতীয় পরিচয়পত্র, ২. টিন সার্টিফিকেটের রঙিন কপি, ও ৩. সর্বশেষ ৩ বছরের জিরো রিটার্ন দাখিলের রশিদ।
এখানের তৃতীয় কাগজটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি টিন বাতিল করতে চায় তাহলে তাকে কমপক্ষে টানা ৩ বছর জিরো রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তারপরেই কেবল সে এটি বাতিলের আবেদন করতে পারবে।
আপনি যদি এবছর বা কিছুদিন আগে টিন রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন তাহলে এখনই এটি বাতিল করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে আগামী ৩ বছর জিরো রিটার্ন জমা দিতে হবে।
প্রতিবছর জিরো রিটার্ন জমা দেওয়ার পরে কর সার্কেল অফিস থেকে একটি করি রিটার্ন প্রাপ্তির রশিদ দেবে। সেগুলো সংরক্ষণ করে থাকতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম ২০২৪
এবার আসুন জেনে নিই কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন সে সম্বন্ধে।
এখানে আমরা মাত্র ৩টি ধাপের মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করবো। আশা করবো এতে বুঝতে সমস্যা হবে না।
- ধাপ-১: শূন্য রিটার্ন জমার প্রাপ্তি রশিদ সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- ধাপ-২: এরপরে আপনার টিন যে সার্কেল অফিসের অধীনে নিবন্ধিত সেই অফিসে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তি সরাসরি যেতে পারে অথবা তার কোনো প্রতিনিধিকে পাঠাতে পারে।
- ধাপ-৩: সার্কেল অফিসের উপ-কমিশনারের নিকট থেকে ফরম বা আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপরে সঠিকভাবে পূরণ করে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার দরখাস্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনার আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। সবকিছু সঠিক থাকলে এবং তিনি সন্তুষ্ট হলে টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল ঘোষণা করবেন।
পরবর্তী সময়ে যদি আপনার আবার TIN এর প্রয়োজন হয় তাহলে নতুন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন না। বাতিলকৃত টিন পুনরায় চালু করে নিতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?
না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বাজেটে টিনধারী ব্যক্তিদের ২০০০ টাকা দেওয়ার নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে। তাই এখন থেকে কারো যদি বার্ষিক করযোগ্য আয় না থাকে এবং টিন সার্টিফিকেট থাকে তবুও তাকে কর দিতে হবে না।
টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি রিটার্ন জমা দিতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। আপনার যদি একটি TIN থাকে এবং প্রতিবছর ৩৫০০০০ টাকার কম উপার্জন করেন তবুও জিরো রিটার্ন জমা দিতে হবে।
অর্থাৎ কারো কর আরোপযোগ্য আয় না থাকলেও প্রতিবছর রিটার্ন জমা দিতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করা হয়।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায় না। এজন্য আপনাকে সরাসরি আঞ্চলিক কর সার্কেল অফিসে যেতে হবে।
শেষাংশ: TIN Certificate Cancel
বাংলাদেশ সহ বেশিরভাগ দেশের সরকারি রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে কর। এই কর আদায়ের অর্থ একটা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নাগরিক পরিষেবা বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা হয়।
কর ফাঁকি দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। করযোগ্য আয় থাকলে কর প্রদান করা একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব। তাই আমরা কখনোই কর ফাঁকি দেবো না।
তবে যাদের বাৎসরিক আয় নির্দিষ্ট অঙ্কের কম তারা চাইলে টিন সার্টিফিকেট বন্ধ করে দিতে পারে। তবে আমার পরামর্শ থাকবে বন্ধ না করার।
৪৪টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা পেতে টিন প্রয়োজন হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স, জমি অথবা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি ক্রয়, আমদানি-রপ্তানি সনদ, শেয়ার বা বন্ড ক্রয় ইত্যাদি।
এখন হয়তো আপনার এসব পরিষেবার প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে যে প্রয়োজন হবে না সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত না।
তখন আপনাকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এছাড়া সরকার আজ ৪৪টি সেবার জন্য টিন বাধ্যতামূলক করেছে। আগামীকাল হয়তো ১৪৪টা সেবার জন্য এটি চাইবে।
তাই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পূর্বে অবশ্যই বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেব। আর খুব সমস্যা না হলে বাতিল করার প্রয়োজন নেই।
যদি একান্ত প্রয়োজনই হয় তবে আশা করবো এই ব্লগটি আপনাদের উপকারে আসবে। চেষ্টা করেছি টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপস্থাপন করতে।