আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ জেনে এবং নিয়মিত এই পবিত্র সূরাটি পাঠ করে আপনি এর অসীম সাওয়াব লাভ করতে পারেন। এই ব্লগে আমরা আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত সম্পর্কেও জানবো।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ |
আসসালামু আলাইকুম, পৃথিবীর সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কিতাব হলো পবিত্র আল কোরআন। এ কিতাবের মহত্ত্ব পৃথিবীর সকল ধরনের কিতাবের ঊর্ধ্বে।
পৃথিবীর আসমান-জমিনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার নিয়মাবলি এখানে উল্লেখ আছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল তথ্যের উৎস হলো এই পবিত্র আল কোরআন। এ কিতাব আমাদের মনুষ্যজাতির আলোর পথ।
আমাদেরকে সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা থেকে বিরত থাকতে এবং মহৎ ও কল্যানের পথে হাঁটতে পথ দেখানোর সকল কিছু এই পবিত্র কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ কিতাব মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও আল্লাহর বন্ধু নবী করিম (সাঃ) উপর নাযিল করে।
এই পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বড় এবং দ্বিতীয় সূরা হলো সূরা বাকারা। সূরা বাকারার মধ্যে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি অংশ হলো আয়াতুল কুরসি, যেটি এ সূরার ২৫৫ নম্বর আয়াত। এই আয়াতটিকে বলা হয় সমগ্র কোরাআনের নেতা।
আয়াতুল কুরসির সমগ্র জুড়ে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর একত্ববাদ, মহত্ত্ব এবং ক্ষমতার কথা। এজন্য, মহান রাব্বুল আলামিন এই আয়াতের মধ্যে অত্যন্ত পূণ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আয়াতুল কুরসি আমাদের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এটা অনেকেই জানি না। তাই আমরা যারা জানি না , তাদের উদ্দেশ্যে আজকে আমাদের ব্লগটি। আজকে আমরা শেয়ার করব আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত নিয়ে।
আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনারা সহজেই আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ শিখে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
আয়াতুল কুরসি আরবি লেখা
আপনারা যারা কোরান পড়তে জানেন কিংবা আরবি ভাষা পড়তে পারেন তাদের কাছে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ দেখার চেয়ে আরবি লেখা পড়ে উচ্চারণ করাই উত্তম।
তাই নিচের অংশে আয়াতুল কুরসি আরবি লেখা তুলে ধরলাম। যাতে যেসকল ভাই ও বোনেরা শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারেন তারা উপকৃত হন।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
এ অংশে আমাদের মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আয়াত আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ নিয়ে লিখব। এ অংশটি পড়ে আপনারা যারা পবিত্র কোরআন উচ্চারণ করতে পারেন না, তারা সহজেই বাংলা দেখে এই ফজিলতপূর্ণ আয়াতটি মুখস্থ করে ফেলতে পারবেন।
আল্লা-হু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম। লা তা’ খুযুহু সিনাতুঁ-ওয়ালা নাঊম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওমা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাজি ইয়াশফাঊ ই’নদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওমা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম মিন ঈলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বা ওয়ালা ইয়াউ’দুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিয়্যুল আজীম। (সূরা আল বাক্বারা-২৫৫)
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি
আপনাকে যেন বারংবার ইন্টারনেট অন করে এই ব্লগটি পড়তে না হয় সেজন্য আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি সংযুক্ত করলাম।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি |
এই ছবিটি আপনার ফোনে সেভ করে রাখুন এবং যখন পড়তে চাইবেন সহজেই গ্যালারি থেকে এটি ওপেন করে পড়ে ফেলুন।
আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাই অন্য ভাষার তুলনায় আমরা বাংলা ভাষায় ভালো বুঝি। এজন্য আমাদের উচিত পবিত্র কোরআনের অর্থ বাংলায় বুঝে বুঝে পড়া। এতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এমনকি মহান রাব্বুল আলামিনও বলেছেন আমাদেরকে কোরআনের অর্থ বুঝে, সুস্পষ্টভাবে পড়তে।
এজন্য এ অংশে পবিত্র আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ বলা হলো। আপনারা যারা আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ বুঝেন না, তারা এই অংশ পড়ে জেনে নিবেন।
অর্থ: আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকটে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবই কিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞান সমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছে করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান। (সূরা বাকারা-২৫৫)
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ভিডিও
আমরা যা শুনি তা সহজেই বুঝতে পারি এবং দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারি। তাই আপনার সুবিধার্থে নিচে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ভিডিও যুক্ত করে দিয়েছি।
আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআনের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী একটি আয়াত। এ আয়াতে রয়েছে জান্নাত লাভের পথ, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ, খারাপ জ্বিন ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে দূরে থাকার পথ, ফেরেশতার সঙ্গ পাবার পথ ও রহমত-বরকত লাভের পথ ইত্যাদি। আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত অসংখ্য।
হযরত আবু উমামা থেকে বর্ণিত- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাত লাভের পথে মৃত্যু ব্যতীত কোনো বাধা থাকবে না। (নাসায়ী, হাদিস: ৯৪৪৮; তাবারানি, হাদিস: ৭৮৩২)
হযরত উবাই বিন কা’ব থেকে বর্ণিত এক হাদিসে- নবী করিম (সাঃ) উবাই বিন কা’বকে জিজ্ঞেস করলেন “তোমার কাছে পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত কোনটি?” উবাই বিন কা’ব উত্তর দিলেন -“আল্লাহ লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।” নবী করিম (সঃ) তখন উবাই বিন কাবের বুকে হাত বললেন -তোমার এই জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ।” (মুসলিম, হাদিস:১৩৯৬)
আরেকটি হাদিসে হযরত আবু হুরাইয়া থেকে বর্ণিত – কোনো এক রমজান মাসে নবী করিম (সাঃ) দান-সদকার মাল পাহারা দেওয়ার জন্য আবু হুরাইয়াকে নিযুক্ত করেন। একদিন রাতের বেলা অচেনা এক লোক এসে মালামালগুলো চুরি করছিলো। তখনই আবু হুরাইয়া তাকে ধরে ফেলল এবং বলল- “আল্লাহর কসম আমি আপনাকে নবী করিম (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবো।
তখন লোকটি বলল- “আমি অভাবী, আমার এগুলোর খুব দরকার। আমাকে ছেড়ে দিন।” তখন আবু হুরাইয়া তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরের দিন নবী করিম (সা:) আবু হুরাইয়াকে জিজ্ঞেস করল -“তোমার গতরাতের বন্দীর কী হলো?” আবু হুরাইয়া উত্তরে বললেন যে “বন্দি অনেক অভাবী ছিল, তাই দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি।”
রাসুল (সা:) আবু হুরাইয়া-কে প্রতুত্তরে বললেন-” বন্দী তোমাকে মিথ্যা বলেছে। ও আবার আসবে।” রাসুল (সা:) কথা শুনে আবু হুরাইয়া আবার তার পরের দিন একইভাবে যাকাতের মালামালের কাছে পাহারা দেয়। ওদিন আবার ওই লোক চুরি করতে আসে এবং আবার আবু হুরাইয়া তাকে ধরে ফেলে।
তখন আবু হুরাইয়া আবার বলে যে আজকে তাকে রাসুল (সা:) কাছে নিয়ে যাবে। তখনও লোকটি বলল -“আমি অভাবী, এজন্য এসেছি। আমি আর আসবো না। আমাকে ছেড়ে দিন।” এবারও লোকটির কথা শুনে আবু হুরাইয়ার মনে দয়া হলো এবং মাফ করে দিল। তার পরের দিন আবার রাসুল (সা:) আবু হুরাইয়াকে তার বন্দী সম্পর্কে জানতে চাই। তখনও আবু হুরাইয়া বলে যে, “হুজুর, লোকটি অভাবী ছিল বলে আকুতি করছিলো। এজন্য আবার ছেড়ে দিয়েছি।
রাসূল (সাঃ) আবারও বললেন, “উনি মিথ্যা বলেছে, উনি আবার আসবে চুরি করতে”। রাসুল (সা:) কথা শুনে আবু হুরাইয়া আবার তৃতীয় দিন একইভাবে পাহারা দেয় এবং চোরটি আবার এসে চুরি করতে থাকে। তখন আবু হুরাইয়া তাকে ধরে ফেলে এবং বলে আজ আর তোমার মাফ নেই। তুমি প্রতিদিন একই কথা বলো যে আসবে না। অথচ চুরি করতে ঠিকই চলে আসো।
তখন লোকটি যখনই বুঝলো পরিস্থিতি বেগতিক। তখন তিনি আবু হুরাইয়াকে বলেন, “আমাকে ছেড়ে দিন। বিনিময়ে আমি আপনাকে এমন কিছু বলব যেটা রাতে ঘুমানোর আগে পড়লে আল্লাহ আপনার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দিবে সারারাতের জন্য এবং শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। এছাড়াও, এর মাধ্যমে আপনার কল্যাণ হবে। তখন আবু হুরাইয়া বলে, “সেটা কী?”
লোকটি বলে, “পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত।” আবু হুরাইয়া লোকটির কথা শুনে আবারও ছেড়ে দিলেন। পরের দিন নবী করিম (সাঃ) আবার আবু হুরাইয়াকে তার বন্দী সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আবু হুরাইয়া নবী করিম (সাঃ) কে সবকিছু বিস্তারিত বললেন।
নবী করিম (সাঃ) আবু হুরাইয়াকে বলল, “লোকটি যদিও মিথ্যাবাদী, তবুও কালকে তিনি তোমাকে সত্যি কথা বলেছে। নবী করিম (সাঃ) আরও বললেন, “আবু হুরাইয়া তুমি জানো লোকটি কে?” আবু হুরাইয়া উত্তরে বললেন, “উনি কে হুজুর?” রাসুল (সা:) বললেন, “লোকটি ছিল শয়তান”। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৩১১)
এই হাদিস থেকেই বোঝা যায় আয়তুল কুরসি সন্ধ্যা বেলা পাঠ করলে সারারাত পাঠকের চারপাশে ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে এবং পাহারা দেয়। আবার সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা অব্দি আবার ফেরেশতা পাহারার কাজে নিযুক্ত থাকে। এই সময়ের মধ্যে পাঠক শয়তানের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে দূরে থাকে।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ এর পাশাপাশি কয়েকটা হাদিস সম্পর্কে আমরা জানলাম। আসুন এবার এই সম্পর্কিত আরেকটা জনপ্রিয় হাদিস জেনে নিই।
উবাই বিন কা’ব হতে বর্ণিত এক হাদিসে, উবাই বিন কা’বের একটি খেজুর রাখার থলি ছিল। সেখানে খেজুর দিনদিন কমতেই থাকতো। তাই একদিন উনি পাহারা দেয়। এবং লক্ষ্য করল যুবকের মতো একজন তার থলি থেকে খেজুর নিচ্ছে। উবাই বিন কা’ব তার হাত ধরে ফেলল। তার হাত ছিল কুকুরের মতো এবং পশম ছিল কুকুরের পশমের মতো। উবাই বিন কা’ব তাকে সালাম দিল এবং জিজ্ঞেস করলো, “কে তুমি? মনুষ্য জাতি নাকি জ্বিন জাতি?” উনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, “জ্বিন জাতি”।
আপনি সাদকা করতে পছন্দ করেন তাই কিছু সাদকার ফল নিতে এসেছি। উবাই বিন কা’ব তখন তাকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের অনিষ্ট থেকে আমাদের বাঁচার উপায় কী?” তখন জ্বিনটি উত্তরে বললেন, “সকাল-সন্ধ্যা আয়তুল কুরসি পাঠ করা। সকালে আয়তুল কুরসি পাঠ করলে সন্ধ্যা অব্দি আমাদের অনিষ্ট থেকে দূরে থাকতে পারবেন। আবার সন্ধ্যায় পড়লে সকল অব্দি আমাদের অনিষ্ট থেকে দূরে থাকতে পারবেন। (সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস:৭৯১)
উপরের এই হাদিস গুলো থেকে আমরা আয়তুল কুরসির ফজিলতের তাৎপর্য বুঝতে পারি। আয়তুল কুরসি আমাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ বার এবং সকাল-সন্ধ্যা ২ বার। অর্থাৎ কমপক্ষে দিনে ৭ বার আয়তুল কুরসি পাঠ করা ।
তাই আমরা যারা জানি না, তারা আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ দেখে দেখে আয়াতটি মুখস্থ করে নিবো ইনশাআল্লাহ।