প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা থাকার কারণে অনেক বিদেশগামী কর্মীরা এই ঋণ সেবা নিতে পারে না।
আবার আমাদের মধে এমন অনেকে আছেন যারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি তা জানেন। কিন্তু লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানেন না। ফলে এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৩ |
আপনি যদি বিদেশে কাজের জন্য বৈধ ভিসার অনুমোদন পেয়ে থাকেন কিংবা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে চান কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে আপনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে।
প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এই ঋণ সেবা সম্পর্কে আজকের ব্লগে বিস্তারিত জানবো। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পেতে কি কি কাগজ লাগে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা ও আবেদন করবেন কিভাবে তা সম্বন্ধে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন হলো সরকারের একটি বিশেষ ঋণ সেবা। যার মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের অথবা বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের সহজ শর্তে জামানত বিহীন ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়।
১০০ কোটি টাকা প্রাথমিক মূলধন নিয়ে ২০১০ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু হয়।
এই ব্যাংক প্রবাসীদের ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকদের ঋণ সেবা দিয়ে থাকে। তবে এই ব্যাংকের প্রধান কাজ ও উদ্দেশ্য হলো প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ মঞ্জুর করা।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন এর প্রকারভেদ
ব্যাংকটির বিভিন্ন ধরণের ঋণ সুবিধা চালু থাকলেও প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রধানত ৪ প্রকার। যথা:
- অভিবাসন ঋণ
- পুনর্বাসন ঋণ
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
- বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
১. অভিবাসন ঋণ
যারা বৈধ উপায়ে বিদেশ যেতে চায় এবং কাজের জন্য ভিসা ও পাসপোর্ট অনুমোদন পেয়েছে তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা অভিবাসন ঋণ স্কিমের কাজ। এই স্কিমে সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদে ৩ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।
২. পুনর্বাসন ঋণ
যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায় কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধন নেই তাদেরকে পুনর্বাসন ঋণ দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে জামানত বিহীন সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। আর জামানতের বিপরীতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেতে পারে। এ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর।
৩. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বৈধ ভিসায় কাজের উদ্দেশ্য বিদেশে গেলে তার আয়ের উপরে নির্ভরশীল দেশে থাকার তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অথবা সে দেশে ফিরলে তার জন্য সহজ শর্তে যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ বলে।
এই স্কিমের অধীনে একজন গ্রাহক জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং জামানত জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারে। স্কিমের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর।
৪. বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
এই স্কিম নতুন চালু করা হয়েছে। ২০২০ সালের করোনা মহামারী এর পর থেকে বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ সুবিধা চালু করা হয়।
যেসকল প্রবাসী কর্মী করোনার কারণে দেশে ফিরে এসেছে তাদেরকে অথবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে এই ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
এই ঋণের ক্ষেত্রেও একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জামানত বিহীন ঋণ নিতে পারে। আর জামানত যুক্ত ঋণ পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ।
তবে গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা
এতক্ষণে বিভিন্ন ধরণের লোন সুবিধা সম্বন্ধে জেনেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে জানার আগে এই ঋণের সুবিধাগুলো জানা প্রয়োজন।
এবার আসুন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন এর সুবিধা কি কি আছে তা সম্পর্কে খানিকটা জেনে নিই। উপরের প্রকারভেদ দেখে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আপনার কোন ধরণের লোন প্রয়োজন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা হলো-
- সহজ শর্তে দ্রুত ঋণ সেবা পাওয়া যায়।
- সুদের হার অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় অনেক কম।
- জামানত বিহীন ঋণ সেবা পাওয়া যায় এবং জামানত যুক্ত বড় অঙ্কের ঋণ পাওয়া যায়।
- ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। ফলে ঋণ খেলাফি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এছাড়াও অন্যান্য সুবিধাদি সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়তে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে?
অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রমের মতো এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আপনাকে কিছু বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কি কি কাগজপত্র লাগে তা ঋণের ধরন ও টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে? |
তবে সাধারণত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে যা যা কাগজপত্র লাগে তা হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভিসার ফটোকপি
- বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ্য দলিল
- আবেদনকারীর সদ্যতোলা ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- দুই জন জামিনদারের প্রত্যেকের ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রামাণ্য দলিল
- জামিনদারের যেকারো সাক্ষরকৃত ৩টি বৈধ ব্যাংক চেক
- ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি (পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে)
- প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, ঠিকানা ও সর্বশেষ ১ বছরের আয়-ব্যয় বিবরণী সম্বলিত প্রতিনেদন (পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে)
উপরে সকল ধরণের স্কিমের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কথা উল্লেখ করেছি। এছাড়া এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার যোগ্যতা
সকল আবেদনকারীই এই লোন নিতে পারবে না। এই লোনের জন্য উপযোগীদেরই কেবল ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার যোগ্যতা হলো নিম্নরূপ-
- আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক ও বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
- যে শাখায় আবেদন করবে আবেদনকারীকে সেই শাখার বাসিন্দা হতে হবে।
- অন্যকোনো ব্যাংক বা NGO এর সাথে ঋণ খেলাপির ইতিহাস থাকা যাবে না।
- আবেদনকারীর সপক্ষে কমপক্ষে ২ জন জামিনদার থাকতে হবে এবং ঋণ পরিশোধে তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হবে।
- পুনর্বাসন ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায় বা প্রকল্পের ঠিকানা, উদ্দেশ্য সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়ে হবে।
- অভিবাসন ঋণ পেতে আবেদনকারীর বিদেশে কাজের জন্য বৈধ ভিসা পেতে হবে।
উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে আপনি Probashi Kallyan Bank Loan এর জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৪
এতক্ষণে আমরা এই ঋণের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আশা করবো এসব তথ্য ও সুবিধা সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছে।
ব্লগের এই অংশে আমরা জানবো প্রবাসী কল্যাণ বাংলা লোনের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়, কোথায় আবেদন করতে হয় সে সম্পর্কে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার নিয়ম হলো:
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ: উপরে আমরা উল্লেখ করেছি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করবেন। এরপর আবেদনকারী ও জামিনদারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফেলুন।
- অ্যাকাউন্ট খোলা: ঋণ নেওয়ার জন্য দ্বিতীয় ধাপ হলো এই ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যাংক লোন নগদ টাকায় দেওয়া হয় না, বরং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে উত্তোলন করে নিতে পারবেন।
- আবেদন ফরম পূরণ: এ পর্যায়ে এসে ব্যাংক থেকে একটি প্রবাসী কল্যাণ ঋণের আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। আবার চাইলে অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে তা পূরণ করে নিয়ে যেতে পারেন। ব্যাংকের শাখায় বিনামূল্যে এই ফরম সরবরাহ করা হয়।
- আবেদনপত্র জমাদান: সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করার পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাতে সংযুক্ত করতে হবে। এরপর ব্যাংকের শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হবে।
- ঋণ মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর: ব্যাংকের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। এরপর সকল তথ্য সঠিক থাকলে এবং আপনি উক্ত ঋণের জন্য উপযুক্ত হলে আপনাকে ঋণ প্রদান করা হবে। আর যদি কোথায় ভুল-ত্রুটি কিংবা অসামঞ্জস্য থাকে তাহলে আবেদন নামঞ্জুর করে দিবে।
এই কয়েকটা ধাপ অনুসরণ করে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ পেতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পেতে অনলাইনে আবেদন করা যায় না। আপনাকে নিকটস্থ শাখায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে তা জমা দিতে হবে।
তবে অনলাইন থেকে আবেদনের ফরম সংগ্রহ করা যায়। এজন্য উপরের অংশ খেয়াল করুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার কত?
আপনাদের অনেকেই এই বিষয়ে জানয়ে আগ্রহী। তাদের অবগতির জন্য বলছি,
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার ৯%। তবে বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৪% এবং বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৭%।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একজন ব্যক্তির জন্য জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং জামানতযুক্ত সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেয়।
আর গ্রুপ লোনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা করে মোট ৫ জনকে ২৫ লাখ টাকা লোন দেয়।
ইতিকথা
এই ছিল আজকের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি।
এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।
বিদেশ থেকে আসার পাঁচ বছর পরে এই লোন দেয় না। তাই আমরা বিদেশ থেকে সাত বছর হয়েছ আখন আমরা কি করবো
ঋণ নেওয়ার ভীষণ প্রয়োজন হলে অন্যকোনো ব্যাংক থেকে নিতে পারেন।
Assalamoalaikom
Assalamoalaikom