আসসালামু আলাইকুম! দরখাস্ত লেখার নিয়ম শীর্ষক ব্লগে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের শিক্ষাগত, পেশাগত এবং নাগরিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই দরখাস্ত প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের প্রত্যেককেই দরখাস্ত কমবেশি লিখতে হয়।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম |
দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বিষয়টি একটি ফরমাল ব্যাপার। এজন্য, কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি অনুসরণ করে সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে হয়।
কিন্তু আমরা অনেকেই সঠিকভাবে এটি লিখতো পারি না। ফলে দরখাস্তের মাধ্যমে আমরা যে আর্জি জানায়, সেটি অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না।
আজ আপনাদের সাথে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেয়ার করব। সকল ধরনের দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবিসহ আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তাহলে শেষ পর্যন্ত থাকুন আমাদের সাথে।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম
দরখাস্ত লিখতে আমাদের বেশ কিছু বিষয় জানা দরকার। কারণ সেগুলো ব্যতীত একটা দরখাস্ত পরিপূর্ণ হবে না। বরং দরখাস্ত শুধু কষ্ট করে লেখাই হবে।
দরখাস্ত অনেক ধরনের হয়ে থাকে। ধরণের ভিন্নতার কারণে একটি দরখাস্ত হতে আরেকটি দরখাস্তে পার্থক্য দেখা যায়। তবে সব দরখাস্তে কমন যে বিষয়গুলো থাকে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে এ অংশে উল্লেখ করব।
১. তারিখ: সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আসে, সেটি হলো তারিখ। একটি দরখাস্ত লিখতে সঠিক তারিখ ব্যবহার করা খুব জরুরি। ভুল তারিখ হলে দরখাস্ত কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহনযোগ্যই হবে না। তারিখ লেখার ক্ষেত্রে ৫ই মার্চ, ২০১৮ এরকম হলে উত্তম হয়।
২. প্রাপক: দরখাস্ত যার বরাবর লিখবেন তার পদ মর্যাদা লিখতে হবে। যেমন- প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ইত্যাদি এবং তার ঠিকানা।
৩. বিষয়: এ অংশে দরখাস্ত কীসের জন্য লিখবেন সেটি এক লাইনে তুলে ধরতে হবে। যেমন- “অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন”।
৪. সম্বোধনসূচক শব্দ: এখানে দরখাস্তের মূল অংশ শুরু করার আগে যাকে দরখাস্তের মাধ্যমে আর্জি জানাবেন তাকে সম্মানসূচক সম্বোধন করে লিখবেন। যেমন- হুজুর, জনাব, মহোদয় ইত্যাদি।
৫. বডি: এ অংশে দরখাস্তের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে। এখানে শব্দ প্রয়োগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। শব্দ গুলো হবে মার্জিত ও গোছালো। এই অংশে অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করে মূল বিষয়বস্তু অল্প কথায় ফুটিয়ে তুলতে হবে।
৬. আবেদনকারীর পরিচয় ও ঠিকানা: এটি হলো একটি দরখাস্তের সর্বশেষ অংশ। এখানে যিনি দরখাস্ত লিখবেন তার নামসহ ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
সংযুক্তি : দরখাস্তে কোনো কাগজপত্র সংযুক্ত করার থাকলে দরখাস্তের শেষাংশে সংযুক্তি লিখে কাগজপত্রের নাম উল্লেখ করতে হবে।
উপরের এই নিয়মগুলো একটি দরখাস্ত লেখার মৌলিক জ্ঞান। যেগুলো সবাইকে জানা দরকার। এগুলো জানলে দরখাস্ত লেখা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি
আপনারা অনেকেই ছবি খুঁজে থাকেন। তাদের জন্য এই অংশে একটা দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি সংযুক্ত করেছি।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম ছবি |
উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করলে এবং ছবিটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে আশা করছি বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবেন।
চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমাদের শিক্ষিত সমাজে পেশাগত জীবনের শুরুতে সবাইকে-ই কমবেশি চাকরির দরখাস্ত লিখতে হয়। কারণ প্রতিটা চাকরিতেই দরখাস্ত হচ্ছে প্রবেশদ্বার। তাই এই দরখাস্ত লেখা শেখা খুবই জরুরি।
এই দরখাস্তটি হতে হবে মার্জিত এবং কেন উক্ত চাকরির পোস্টে কর্তৃপক্ষ আপনাকে নিয়োগ দিবে তার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হবে। তো চলুন, চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম আমরা একটি নমুনার মাধ্যমে জেনে নিই।
১০ই জুলাই, ২০২৩
বরাবর
এসিআই লি.
কারওয়ানবাজার, ঢাকা
বিষয়: হিসাবরক্ষণ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, গত ৪ই ফেব্রুয়ারী দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আপনার প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ বিভাগে হিসাবরক্ষণ পদে কয়েকজন লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আমি উক্ত পদের জন্য একজন প্রার্থী হিসেবে আপনার জ্ঞাতার্থে আমার জীবনবৃত্তান্ত আপনার নিকট তুলে ধরলাম।
নাম:
পিতার নাম:
মাতার নাম:
বর্তমান ঠিকানা:
স্থায়ী ঠিকানা:
জাতীয়তা:
ধর্ম:
বৈবাহিক অবস্থা:
ইমেইল এড্রেস:
মোবাইল নম্বর:
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা:
- সানরাইজ লি. এ গত ৩ বছর যাবৎ হিসাবরক্ষণ পদে চাকরির অভিজ্ঞতা।
- মাইক্রোসফট এক্সেলে ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে পারদর্শী
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, উক্ত পদে আমাকে যোগ্য বিবেচনা করে একজন প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আমাকে বাধিত করবেন।
উপরের এই ধাপগুলি মেইনটেইন করলেই আপনারা খুব সহজেই একটি কার্যকরী চাকরির দরখাস্ত লিখতে পারবেন।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বাংলা দরখাস্ত অনেক প্রকার হয়ে থাকে। প্রকারভেদে বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম ভিন্ন হয়ে থাকে। এসকল দরখাস্ত যাতে আপনারা লিখতে পারেন সেজন্য বাংলা দরখাস্ত লেখার সকল নিয়ম আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
আরও জানুন: চাকরির সিভি লেখার নিয়ম
অফিসে ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমরা যারা চাকুরীজীবি তারা যে বছরে একদিনও অফিসে অনুপস্থিত হবো না এর নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা, বিপদ-আপদ থাকতেই পারে।
কিন্তু অফিস চলবে অফিসের নিয়মে। অফিস কর্তৃপক্ষ চাইবে তাদের কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ প্রতিদিনই অফিসে আসুক। তবে, যদি এক অথবা দু’দিন জরুরি প্রয়োজন আসতে নাই পারে তাহলে অধীনস্থদের ফরমালি কিছু নিয়ম কানুন পালন করতে হয়।
তন্মধ্যে একটি হলো অনুপস্থিতির জন্য অফিসিয়াল দরখাস্ত লেখা। চাকরিজীবীদের অফিসে অনুপস্থিত হওয়ার কারণ উল্লেখ করে দরখাস্ত লিখে ছুটি নিতে হয়।
এখন আমরা শিখব নমুনাসহ অফিসে ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে।
৭ই জুলাই, ২০২৩
বরাবর
বিপণন ব্যবস্থাপক
পানকৌড়ি পাবলিকেশন্স লি. রাজশাহী
বিষয়: বিশেষ প্রয়োজনে ছুটির আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের বিপনন বিভাগের সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক। আমি সাধারণত নিয়মিত-ই অফিসে উপস্থিত হয় এবং যথাসময়ে সকল কাজ সম্পূর্ণ করে থাকি। আমার মা হঠ্যাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আগামী ১২ই জুলাই আমি আমার মাকে নিয়ে রাজধানী শহর ঢাকাতে যাওয়াটা খুবই জরুরি। এজন্য আমি আগামী ৩ দিন অফিসে উপস্থিত হতে পারব না।
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য আমাকে আগামী ১২-১৪ই জুলাই পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করে আমাকে বাধিত করবেন।
চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমাদের নাগরিক জীবনের অনেক সমস্যা সমাধান করতে এবং সুযোগ-সুবিধা পেতে প্রায়-ই এলাকার দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের দারস্থ হয়। তবে, কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে শুধু মৌখিক ভাবে বললে হয় না, বলতে হয় অফিশিয়ালি দরখাস্তের মাধ্যমে।
কিন্তু আমরা অনেকেই এ বিষয়টিতে কাচা। আপনাদের সুবিধার জন্য কীভাবে চেয়্যারম্যানের কাছে একটি দরখাস্ত লিখতে হবে সেরকমই একটি নমুনা তুলে ধরা হলো –
১০ই জুলাই, ২০২৩
বরাবর
চেয়্যারম্যান
পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা
বিষয়: টিউবওয়েল সংস্থাপনের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার দায়িত্বরত পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৫নং ওয়ার্ডের জামপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার একজন বাসিন্দা। গত কয়েকমাস টিউবওয়েলের অভাবে আমাদের পাড়ায় নিরাপদ পানির সংকট তীব্র হয়ে দাড়িয়েছে। নিরাপদ পানির অভাবে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও রয়েছে। এমতাবস্থায়, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পাড়ায় দুটি টিউবওয়েল সংস্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি আপনাকে।
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় যত দ্রুত সম্ভব দুটি টিউবওয়েল সংস্থাপনের ব্যবস্থা করলে আমরা এলাকাবাসী আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
অফিশিয়াল দরখাস্ত লেখার নিয়ম
অন্যান্য বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম মেনেই অফিসিয়াল দরখাস্ত লিখতে হয়।
অফিসিয়াল দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে একটু পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। শব্দচয়ন হবে যাকে লিখছেন তার পদমর্যাদার সাথে প্রাসঙ্গিক।
আরও জানুনঃ সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
উপরে আবেদনপত্র লেখার জন্য যেসব নির্দেশনা দিয়েছি এগুলো অনুসরণ করলেই হবে। অফিসিয়াল দরখাস্ত লেখার নিয়ম বলতে সেসরকম বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই।
প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমরা যারা শিক্ষার্থী, তাদেরকে প্রায়ই কোনো না কোনো কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত লিখতে হয়। যেসব শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানে না, তাদের জন্য নমুনাসহ দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমি আপনার বিদ্যালয়ে বরাবরই সকল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী হয়ে থাকি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও দশম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী হয়েছি।
আমার বাবা একজন কৃষক। আমরা ৬ সদস্যের পরিবার। আমারা তিন ভাইবোন পড়াশোনা করি। সামান্য একজন কৃষক হয়ে সংসারের ভরণপোষণ মিটিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালানো বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে, আমার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমতাবস্থায়, আপনার সহায়তা পাওয়া আমার খুবই দরকার।
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমাকে ছাত্র কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমাকে বাধিত করবেন।
নিবেদক-
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্র
ওয়াহিদ নিহান
শ্রেণি: দশম শাখা: ক রোল নং: ০১
ইতিকথা
আমাদের প্রত্যেককেই দরখাস্ত লিখতে হয়। কোনো কাজের উদ্দেশ্যে একটি সুন্দর, মার্জিত দরখাস্তই কাজটিকে খুব সহজ করে দেয়।
আশা করি, আমাদের বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। আজ অনেক ধরনের দরখাস্ত নিয়ে আলোচনা করলাম।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সার্কুলার ২০২৪
আপনাদের কেমন লেগেছে তা কমেন্টে জানাবেন।