দরকারি AI টুলস সম্পর্কিত ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence সংক্ষেপে AI.
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেয় অন্যদিকে এটি মানবজাতির জন্য কিছুটা ভয়*ঙ্করও বটে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা অটোমেশনের ফলে কাজের অনেক ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজনীয়তা কমে আসে। আবার নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।
এই ধরুন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার ফলে রেডিও জকি, ডাক বিভাগের কর্মী, সনাতন ব্যবসায়ীদের কর্মক্ষেত্র কমে এসেছে।
আবার অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স, কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মতো বড় বড় সেক্টর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেরকম AI প্রযুক্তির প্রভাবেও অনেক মানুষ কাজ হারাবে আবার অনেকে নতুন কাজ খুঁজে পাবে।
বর্তমানে এআই প্রযুক্তি খুবই প্রাথমিক ধাপে আছে। ভবিষ্যতে এর ব্যাপক উন্নতি হবে সে বিষয়ে সকলেই নিশ্চিত।
ইতোমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের কাজকে রিপ্লেস করে দিতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এই হার আরও বৃদ্ধি পাবে।
আর আপনি যদি প্রযুক্তির এই জামানায় টিকে থাকতে চান তাহলে প্রযুক্তির সাথে যুদ্ধ না করে বরং এই প্রযুক্তিকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে আরও ভালো ফলাফল বের করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
আজকের ব্লগে আমরা এমন ৫টি এআই টুলস সম্পর্কে জানবো যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
তার আগে এআই প্রযুক্তি কি সে সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেব। আশা করবো আজকের ব্লগটি আপনারা সম্পূর্ণ পড়বেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কি? (What is AI?)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের এমন একটি আবিষ্কার যা হুবহু মানুষের মতো ভাবতে, চিন্তা করতে ও কাজ সম্পাদন করতে পারে।
গবেষকরা এআই সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো একক সংজ্ঞা দিতে রাজি নন। কারণ এটা একটা বিশাল ক্ষেত্র।
তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো এটি এমন প্রযুক্তি বা প্রোগ্রাম যা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস করে মানুষের মিতো করে সিদ্ধান্ত নিতে ও কাজ করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তি এখনো বেশ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এটি সবসময় সঠিক তথ্য বা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী এক দশকে এআই প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে উন্নত হবে।
কোনো একটা এআই টুল তৈরির আগে একে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অনেক তথ্য সংগ্রহ করে তা একত্র করা হয়, এরপরে সেসব তথ্য দিয়ে এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ব্যবহারকারীরা যখন কোনো কাজের কমান্ড বা নির্দেশনা দেয় তখন এটি সেই বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ সঠিক আউটপুট দেওয়ার চেষ্টা করে।
৫টি দরকারি এআই টুলস (AI Tools)
সম্প্রতি ChatGPT প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সারাবিশ্বে AI Technology নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এরই মাঝে অনেকে এটির সম্ভাবনা দেখছে। আবার কারো কারো কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
তবে আমরা আপনাদেরকে এমন ৫টি এআই টুলস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যেগুলো ব্যবহার করে আপনি কর্মক্ষেত্রে আরও ভালো ফলাফল আনতে পারবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভয় না পেয়ে বরং এটাকে ব্যবহার করে কিভাবে আরও ভালো কাজ করা যায় আমাদের সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। কারণ ভবিষ্যৎ বিশ্ব এআই নির্ভর হয়ে পড়বে, তাই এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
১. ChatGPT এআই
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এইআই প্রযুক্তি জলো ChatGPT. এটি OpenAI প্রতিষ্ঠানের তৈরি Generative Pre-trained Transformer সম্বলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই টুল।
চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে একজন খুব সহজেই নানান প্রশ্ন, কোড এর সমাধান পেতে পারে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা যাচাইকারী প্রশ্নেরও উত্তর দিতে সক্ষম।
এই AI Tool-টি Natural Language Processing মডেল অনুসরণ করে কার্য সম্পাদনা করে। একজন ব্যবহারকারী এটির সাহায্যে মুহূর্তেই লম্বা ব্লগ পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, কপি রাইটিং, কোড লেখার কাজ করতে পারে।
প্রোগ্রামাররা কোড লেখার সময় জটিল সমস্যার সমধান করতে সুবিধায় পড়লে তা চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে অনায়াসেই সমাধান করিয়ে নিতে পারে।
এছাড়া ভিডিওর জন্য কাল্পনিক গল্প বা স্ক্রিপ্ট লিখতেও চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত বিভিন্ন লেখা বিষয়ক কাজে ব্যবহৃত হয়।
তবে এতকিছুর মাঝেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন এটি প্রায়শই ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। কারণ এতে সর্বশেষ ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য সংযুক্ত আছে।
আপনি যদি লেখালেখি বিষয়ক কোনো কাজে জড়িত থাকেন তাহলে ChatGPT কে আপনার সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
২. Midjourney AI
Midjourney এআই এমন একটি টুল যেটা সাধারণ লেখা থেকে ছবি তৈরি করতে পারে। আপনি কাল্পনিক কিছুর বর্ণনা লিখে দিলে মিডজার্নি সেটা থেকে দারুণ দারুণ ছবি তৈরি করতে পারে।
যেমন ধরুন, আপনি চাইছেন এমন একটা ছবি তৈরি করতে যেখানে একটা ভাল্লুক একটা মানুষের সঙ্গে লড়ছে। এই ছবিটি তৈরির জন্য মিডজার্নিতে ছবিটির বর্ণনা লিখে কমান্ড দিলে এই এআই টুলটি আপনাকে বেশ কিছু Realistic Illustration Image সরবরাহ করবে।
যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করেন তাদের জন্য Midjourney এআই খুবই সহায়ক একটি টুল। এছাড়াও এটি দিয়ে কোনো ছবির বিভিন্ন ধরণ তৈরি করা যায়।
যেমন ধরুন, রহিম একজন জনপ্রিয় গায়ক। মিডজার্নিকে রহিমের এক বা একাধিক ছবি দিয়ে যদি বলা হয় সে যদি শিক্ষক হতো তাহলে তাকে কেমন দেখাতো সেটার একটা কাল্পনিক ছবি তৈরি করতে, তাহলে এটিও সম্ভব।
এছাড়াও এই টুলটি দিয়ে ছবি ম্যানুপুলেশন করা যায়। যেমন একটা ভাল্লুক দিনের বেলায় জঙ্গলে ঘুরছে এমন একটা ছবি দিয়ে তাকে যদি বলা হয় এটিকে একটা রাতের দৃশ্য তৈরি করতে তাহলে সেটা পারবে।
যারা ডিজিটাল আর্ট তৈরি করেন কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত তাদের জন্য Midjourney AI প্রযুক্তি বেশ উপকারী।
৩. Synthesia AI
যারা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেন তাদের জন্য খুব দরকারি একটি টুল হলো Synthesia AI. এটি ব্যবহার করে কয়েক মিনিটেই লেখা থেকে ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
এই প্ল্যাটফর্মে ১২০টির বেশি অ্যাভাটার রয়েছে। এছাড়া এটি ১৪০ টিরও বেশি ভাষায় লেখা থেকে অডিও তৈরি করতে পারে।
এই AI টুল ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোনো লেখা ইনপুট করতে হবে এবং সেই লেখা থেকে অডিও তৈরি, ভিডিও তৈরি সব কাজই এআই করে দেবে।
বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যামূলক ভিডিও, অ্যাড ক্যাম্পেইন বানাতে এটি বেশ সহায়ক একটি। এখানে আপনি পছন্দের অ্যাভাটার সিলেক্ট করতে পারবেন এবং বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, আরবি সহ ১৪০টি ভাষায় ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
৪. Jasper AI
এটি একটি কন্টেন্ট রাইটিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল। পূর্বের নাম Jarvis AI কে পরিবর্তন করে বর্তমানে এটি Jasper AI নামে পরিচিত।
মুহুর্তের মধ্যেই কপিরাইটিং, ইমেইল রাইটিং, ব্লগ রাইটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট লেখার জন্য কন্টেন্ট রাইটারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় এটি।
এছাড়াও এর এপিআই ব্যবহার করে চ্যাটবট তৈরি করা যায়। যেটি কিছু প্রি-ট্রেইনড কমান্ডের মাধ্যমে ইউজারের কুয়েরি অনুযায়ী প্রশ্নের ইনস্ট্যান্ট উত্তর দিতে পারে।
আমরা যারা কন্টেন্ট রাইটিং করি তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী একটি এআই টুল। আপনি খুব সহজেই লম্বা একটা লেখাকে কয়েকটা কমান্ড দিয়ে সামারাইজ করে ফেলতে পারেন।
৫. Remove.bg
পোস্টার ডিজাইন কিংবা ছবি বিষয়ক নানান কাজে আমাদেরকে কোনো সাবজেক্ট থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করার প্রয়োজন পড়ে।
Adobe Photoshop এর মতো ছবি এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে ম্যানুয়ালি ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করা গেলেও তা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
এছাড়া অনেকে অটোমেটেড টুল দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করা যায়। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সলিড কালার হলে সেগুলো বেশ ভালো ফলাফল দিলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক কালার ও অবজেক্ট থাকে তা ভালোভাবে রিমুভ করা যায় না।
এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করার কাজটি মাত্র এক ক্লিকে করা যায় remove.bg ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এই টুলটি খুব সুক্ষ্মভাবে ছবির সাবজেক্ট থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করতে পারে।
যদি ব্যক্তির চুল এলোমেলো থাকে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে গাছপালা সহ অন্যান্য কিছু থাকে তবুও এটি চমৎকারভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে ফেলবে।
এই AI Tool ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়। তবে হাই রেজ্যুলিউশনের ট্রান্সপারেন্ট ছবি পেতে প্রিমিয়াম একাউন্ট নিতে হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে?
এই প্রশ্নটি আমাদের কম-বেশি সবার মনেই জাগে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিপ লার্নিং ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে।
প্রথমে এটিকে ট্রেটিং দেওয়া হয়। এজন্য বিশাল ডেটা সেট তৈরি করা হয় এবং তাকে সেগুলোর সাথে পরিচয় করানো হয়। এরপরে আমরা যখন তাকে কোনো কমান্ড বা প্রম্পট দেই তখন সে সেই বিশাল ডেটা সেট অ্যানালাইসিস করে এবং সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর বা কার্য সম্পাদন করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে আমাদের আরেকটু ব্লগ প্রকাশ করতে হবে। একই ব্লগে দরকারি এআই টুলস এর পরিচিতির পাশাপাশি এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানানো সম্ভব নয়।
ইতিকথা
ধন্যবাদ আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটা মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। এখানে যে দরকারি ৫টা AI Tools এর কথা উল্লেখ করেছি এর বাইরেও আরও অনেক জনপ্রিয় ও উপকারী এআই প্রযুক্তি রয়েছে।
যেহেতু আমাদের ব্লগের মূল উদ্দেশ্য ছিল মাত্র পাঁচটি টুল সম্পর্কে জানানো তাই এখানে অন্যান্য টুলস নিয়ে লিখিনি।