কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি আমরা তা না জানলেও Network শব্দটি খুব অহরহ ব্যবহার করে থাকি। যারা খানিকটা প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখি কিংবা আইসিটি বই পড়েছি তারা এই প্রশ্নের উত্তরসহ নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি সেটাও জানি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি |
বর্তমানে আমরা যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি সেটা এক দিনে তৈরি হয়নি। কিংবা শুধু একজন ব্যক্তির উদ্যোগেও তৈরি হয়নি।
এই গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার পেছনে একজন ব্যক্তির অবদান সবচেয়ে বেশি থাকলেও এটি বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তি।
তাদের নিরলস পরিশ্রমেরই একটি ফসল হচ্ছে এই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। আজকের ব্লগে আমরা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মূলত ইমেইল থেকে শুরু করে বড় বড় ফাইল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো, মেসেজিং, ভিডিও কলিং, ভিডিও স্ট্রিমিং সবকিছুর মূলেই রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
আসুন এবার নেটওয়ার্ক বা Computer Network কি সে সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।
নেটওয়ার্ক কি? (What is network in bengali?)
দুই বা ততোধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা বা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নেটওয়ার্ক বলে।
আরেকটু সহজভাবে বলতে গেলে, নেটওয়ার্ক হলো একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাসের মাঝে এমন একটি আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা যেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে এক ককম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বিভিন্ন ফাইল, ডেটা, মেসেজ ইত্যাদি প্রেরণ করা হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
নেটওয়ার্ক কি সেটা বুঝতে পারলে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি তা বুঝতে বেশি কষ্ট হবে না।
একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে এসে আমরা Network বলতে মূলত কম্পিউটার নেটওয়ার্ককেই বুঝিয়ে থাকি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো একটি কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি কম্পিউটারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা মূলত বিভিন্ন তথ্যের আদান-প্রদানকে বুঝায়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে শুধু দুইটি কম্পিউটার থাকতে পারে, আবার লক্ষাধিক কম্পিউটার মিলে একটি নেটওয়ার্ক গঠিত হতে পারে।
এছাড়া এই নেটওয়ার্কের আওতায় আরও কিছু ডিভাইস থাকে। যেমন মডেম, রাউটার, হাব, গেটওয়ে, সুইচ, ব্রিজ ও NIC ইত্যাদি।
নেটওয়ার্ক ডিভাইস কি কি সে সম্পর্কে ব্লগের নিচের অংশে আমরা বিস্তারিত জানবো। তাই এখানে এ বিষয়ে আলোচনা করলাম না।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি?
নেটওয়ার্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে আমরা জানবো মালিকানাভিত্তিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি?
মালিকানা ভিত্তিক নেটওয়ার্ক কত প্রকার?
ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ২ প্রকার।
- Public Network (পাবলিক নেটওয়ার্ক)
- Private Network (প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)
১. পাবলিক নেটওয়ার্ক কি?
যে নেটওয়ার্ক কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না তাকে পাবলিক নেটওয়ার্ক বলে। এই নেটওয়ার্কে প্রবেশের জন্য কারো অনুমোদন নিতে হয় না এবং যেকোনো সময় নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা যায়।
পাবলিক নেটওয়ার্কে যেকেউ যেকোনো সময় প্রবেশ করতে পারে বিধায় এখানে অনেক বেশি ট্রাফিক থাকে। ফলে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড তুলনামূলক কম এবং ডেটা প্রাইভেসি খুবই কম।
পাবলিক নেটওয়ার্কের উদাহরণ হলো Wide Area Network বা WAN।
২. প্রাইভেট নেটওয়ার্ক কি?
যে নেটওয়ার্ক নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকে এবং সেই কর্তৃপক্ষ দ্বারা সর্বদা নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে।
প্রাইভেট নেটওয়ার্ক কোনো কম্পিউটার চাইলেই যখন-তখন প্রবেশ করতে পারে না। এজন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তাই এখানে ট্রাফিকের পরিমাণ কম থাকে, ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড অনেক বেশি থাকে এবং এটি অনেক নিরাপদ।
প্রাইভেট নেটওয়ার্কের উদাহরণ হলো Local Area Network, Personal Area Network, Campus Area Network প্রভৃতি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ
এবার আসুন কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মূল প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নি।
ভৌগোলিক অবস্থার ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ৫ প্রকার। যথা-
- PAN (Personal Area Network)
- LAN (Local Area Network)
- MAN (Metropolitan Area Network)
- CAN (Campus Area Network)
- WAN (Wide Area Network)
১. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN)
সাধারণত ১০ মিটার বা তার চেয়েও কম এলাকার মধ্যে একাধিক কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ডিভাইসের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা PAN বলে।
এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় ছোট কোনো দোকান বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, রাউটার, ক্যামেরা ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য।
২. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN)
ছোট আয়তনের অফিস, আদালত, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃসংযোগ তৈরি করতে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN ব্যবহার করা হয়।
এই নেটওয়ার্কের কাভারেজ সাধারণত ১০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে একাধিক রিপিটার ব্যবহার করে এই আয়তন ১ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়।
আমাদের চারপাশে যেসব ছোটখাটো অফিস কিংবা কয়েক তলার ভবন আছে সেগুলোতে বেশিরভাগ সময় ল্যান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। এতে প্রতি সেকেন্ডে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড ১০ মেগাবাইট থেকে ১০ গিগাবাইট পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে রিং, স্টার কিংবা বাস টপোলজি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তার হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, ফাইভার অপটিক ক্যাবল ও কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।
৩. মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN)
যখন কোনো শহর বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত অনেকগুলো কম্পিউটার ও অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসকে সংযুক্ত করতে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN বলে।
MAN এর কাভারেজ LAN এর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে এটি Wide Are Network বা সংক্ষেপে WAN এর চেয়ে কম কাভারেজ দেয়।
Metropolitan Area Network এর কাভারেজ সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখানে ট্রান্সমিশন মাধ্যম হিসেবে টেলিফোন লাইন, ফাইভার অপটিক ক্যাবল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
আর MAN এ তারবিহীন টান্সমিশন মাধ্যম ব্যবহার করা হলে তাকে Wireless Metropolitan Area Network বা সংক্ষেপে WMAN বলে। তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে রিডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
MAN এর স্পিড সাধারণত প্রতি সেকেন্ডে ৩৪ মেগাবাইট থেকে ১৫৫ মেগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে।
৪. ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক কি?
একাধিক LAN কে সংযুক্ত করে Campus Area Network বা CAN তৈরি করা হয়।
যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে একাধিক ভবনে ব্যবহৃত LAN নেটওয়ার্ককে একটি মাত্র নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয় তখন সেই পুরো নেটওয়ার্কে CAN বলে।
বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় অফিস-আদালত, ফ্যাক্টরির একাধিক বিভাগের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশন সহজ করতে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এর কাভারেজ সর্বোচ্চ ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: কম দামে ভালো ফোন কিনুন
৫. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN)
দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কম্পিউটার কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে Wide Area Network বা WAN ব্যবহার করা হয়।
আজকের দিনে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি সেটা WAN এর মাধ্যমেই তৈরি। আর WAN-ই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে টেলিফোন লাইন, মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল এবং ব্যাপকভাগে অপটিক্যাল ফাইভার ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। এর স্পিড সাধারণত ১২০০ bps থেকে ২৪ Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নেটওয়ার্ক টপোলজি কি?
আশা করছি এতক্ষণে বেশ ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি।
এবার আসুন এর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই। তা হলো নেটওয়ার্ক টপোলজি কি।
নেটওয়ার্ক টপোলজি হলো Computer Network এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ডিভাইসগুলোর মধ্যকার সাংগঠনিক রূপ। অর্থাৎ ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে কীভাবে সংযুক্ত আছে তার একটি নকশাকে Network Topology বলে।
নেটওয়ার্ক টপোলজি কত প্রকার? কি কি?
একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের টপোলজি থাকতে পারে। সচারাচর যেসব টপোলজি দেখা যায় তার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক টপোলজি মূলত ৬ প্রকার। সেগুলো হচ্ছে-
- Star Topology (স্টার টপোলজি)
- Ring Topology (রিং টপোলজি)
- Bus Topology (বাস টপোলজি)
- Tree Topology (ট্রি টপোলজি)
- Mesh Topology (মেশ টপোলজি)
- Hybrid Topology (হাইব্রিড টপোলজি)
উপরে উল্লিখিত এসব টপোলজি সম্পর্কে অন্য একটি ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই এখানে এ সম্পর্কে কিছু লিখলাম না।
নেটওয়ার্ক ডিভাইস কী কী?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে শুধু কম্পিউটার হলেই চলে না। এর পাশাপাশি আরও কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রয়োজন পড়ে।
নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলো হলো মডেম, রাউটার, হাব, সুইচ, গেটওয়ে, ব্রিজ, NIC ইত্যাদি।
বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্কের নাম কি?
আমাদের অনেকের মাঝেই এই প্রশ্নটি আছে। কৌতূহলবশত জানতে ইচ্ছে করে বিশ্বের প্রথম Computer Network কোনটি। আপনার মাথায় যদি একই প্রশ্ন থাকে তাহলে উত্তরটা জেনে নিন।
বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্কের নাম হলো ARPANET। ১৯৬৯ সালে আরপানেট তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করার জন্য।
ইতিকথা
সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আজকের ব্লগে ককম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে পেরেছি।
এরকম শিক্ষামূলম আরও ব্লগ পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে পারেন। আপনার দিনটি সুন্দর হোক!