আসসালামু আলাইকুম, স্বাগত জানাচ্ছি সমাস চেনার সহজ উপায় বিষয়ক পোস্টে আজকে আমরা যে টপিক নিয়ে আলোচনা করব সেটা সম্পর্কে আমাদের শিক্ষার্থী বন্ধুদের কম-বেশি সবারই মাথা ব্যাথা থাকে।
![]() |
সমাস চেনার সহজ উপায় |
আজকে আমরা শেয়ার করব সমাস কাকে বলে সে সম্পর্কে। আমরা যারা পড়াশোনা করি এবং চাকরি প্রত্যাশী তাদের কাছে খুব পরিচিত একটা টপিক হলো সমাস। অনেকেরই কাছে সমাস খুব কঠিন লাগে। এমনকি সমাস শিখতে নাকি ৬ মাস লাগে এরকম কথাও প্রচলন আছে।
আপনাদের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আজ আমরা শেয়ার করব সমাস নির্ণয় কৌশল সম্পর্কে। তো বন্ধুরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
সমাস কাকে বলে?
সমাস অর্থ একের অধিক সম্পর্কযুক্ত শব্দের মিলন ঘটিয়ে একটি নতুন শব্দে অথবা পদে পরিণত করা। যা অনেকটা এক কথায় প্রকাশের মতো।
সমাসের উদ্দেশ্য হলো ভাষাকে সংক্ষিপ্ত এবং শ্রুতিমধুর করে তোলা। যেমন কাউকে যদি আমরা যিনি চালাক তিনিই চতুর বলার পরিবর্তে চালাকচতুর বলি তাহলে আমাদের বলা ভাষাটা আরও সংক্ষিপ্ত হলো এবং শুনতে ভালো লাগল। ঠিক এই কাজটাই সমাস করে থাকে।
সমাস ব্যাকরণের শব্দতত্ত্বে আলোচিত একটি টপিক, কারণ এটি শব্দ গঠনে কাজ করে। এটি বাক্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
সমাস কত প্রকার ও কি কি?
সমাসের প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাকরণবিদদের মধ্যে মতের পার্থক্য দেখা যায়। অনেকে বলে সমাস ৬ প্রকার আবার অনেকে বলে ৪ প্রকার এবং এছাড়াও কমবেশি প্রকারভেদ শোনা যায়। তবে রানিং শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশী বন্ধুদের ক্ষেত্রে মোটামুটি সব প্রকারের সমাস সম্পর্কে জানা উচিত।
এজন্য আমরা সমাসের ৬ টি প্রকারভেদ সহ আরো জরুরি প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব। মূলত, মোটা দাগে বললে সমাস ৬ প্রকার।
- দ্বন্দ্ব সমাস
- কর্মধারয় সমাস
- দ্বিগু সমাস
- তৎপুরুষ সমাস
- অব্যয়ীভাব সমাস
- বহুব্রীহি সমাস
এছাড়াও, সমাসের শাখা-প্রশাখা হিসেবে রয়েছে অলুক, নিপাতনে সিদ্ধ ইত্যাদি নানারকমের সমাস।
সমাস শিখতে যেগুলো জানা আবশ্যক
সমাস শিখতে হলে আমাদের সমাসের বিভিন্ন হাত-পা সম্পর্কে আগে জানতে হবে। যেমন একটি বাক্যে কোনটা কোন পদ ইত্যাদি এগুলো সম্পর্কে। একটি সমাসবদ্ধ বাক্যে বেশ কয়েকটি অংশ থাকে। যেমন-
- সমস্ত পদ
- ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য
- সমস্যমান পদ
এখানে সমস্তপদ হলো সেই শব্দটি যাকে ঘিরে সমাসটি সম্পন্ন হয় অথবা ব্যাস বাক্য তৈরি হয়। অর্থাৎ ব্যাস বাক্যের সংক্ষিপ্ত রুপ। ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য হলো সমস্তপদকে ঘিরে যে বড় একটি বাক্য তৈরি হয়। সবশেষ, ব্যাস বাক্যের প্রতিটা পদই হলো সমস্যমান পদ।
এখানে,
জনাকীর্ণ = সমস্তপদ
জন দ্বারা আকীর্ণ= ব্যাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য
জন, আকীর্ণ= সমস্যমান পদ
এখানে সমস্তপদের প্রথম অংশকে বলে পূর্বপদ এবং শেষের অংশকে বলে পরপদ। ‘জন’ হলো পূর্বপদ আর ‘আকীর্ণ’ হলো পরপদ।
সমাস চেনার সহজ উপায়
আমরা অনেকে সমাস কত প্রকার এবং কি কি এসব জেনে থাকলেও কোনটা কোন সমাস এই বিষয়টা ধরতে পারি না। আর সমাসের আসল খেলা হয় এখানে। মূলত কোনটা কোন সমাস এই ধরনের প্রশ্নই বিভিন্ন পরীক্ষাতে বেশি আসতে দেখা যায়। আমরা এই অংশে খুব সহজে এবং শর্টকাটে আপনাদের প্রতিটা সমাস চেনানোর চেষ্টা করবো।
- দ্বন্দ্ব সমাসে ব্যাস বাক্যের মাঝে ও, এবং, আর এই তিনটি শব্দ থাকে।
- কর্মধারয় সমাসে ব্যাস বাক্যে যে বা যিনি উল্লেখ থাকবে এবং সমস্তপদের দ্বারা তুলনা বোঝাবে।
- দ্বিগু সমাসের ব্যাস বাক্যে সংখ্যা জাতীয় শব্দ থাকবে এবং ‘সমাহার’ শব্দটি থাকবে।
- তৎপুরুষ সমাসের ব্যাস বাক্যে বিভক্তসমূহ থাকবে।
- অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদ হিসেবে অব্যয় থাকবে।
- বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘যার’ শব্দটি থাকবে এবং সমস্যমান পদগুলোর নিজস্ব অর্থবাদে ভিন্নধর্মী অর্থে সমস্তপদ তৈরি হবে।
দ্বন্দ্ব সমাস সহজে চেনার উপায়
যে সমাসে উভয় পদের অর্থই সমান প্রাধান্য পায় এবং ও, এবং, আর এই তিনটি সংযোজক অব্যয় অথবা শব্দ দ্বারা যুক্ত হয় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। দ্বন্দ্ব সমাস অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-
- মাতা ও পিতা = মাতা-পিতা
- দা ও কুমড়া = দাকুমড়া
উপরের উদাহরণ দুটিতেই মাতা ও পিতা এবং দা ও কুমড়ার অর্থই সমানভাবে সমস্তপদে গুরুত্ব পেয়েছে।
কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়
যে সমাস দিয়ে পূর্বপদ এবং পরপদের মধ্যে তুলনা বোঝায় এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
- উপমান কর্মধারয় সমাস
- উপমিত কর্মধারয় সমাস
- রুপক কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায় হলো ব্যাস বাক্যের মধ্যে ‘যে’ বা ‘যিনি-তিনি’ এবং রুপ শব্দ উল্লেখ থাকবে। এছাড়াও, বিশেষ্য+বিশেষ্য, বিশেষণ+বিশেষ্য, বিশেষ্য+বিশেষণ এর মধ্যে তুলনা বোঝাবে। যেমন-
- যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি
- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম
- তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র
- যৌবন রুপ সূর্য = যৌবনসূর্য
- অধর পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব
দ্বিগু সমাস চেনার সহজ উপায়
দ্বিগু সমাস চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ব্যাসবাক্যের মধ্যে একটি সংখ্যাবাচক শব্দ ও ‘সমাহার’ শব্দ দুটো উল্লেখ থাকবে এবং সমস্তপদটি একটি বিশেষ্য হবে। এছাড়াও এই সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। উদাহরণস্বরূপ-
- তিন ফলের সমাহার = ত্রিফলা
- শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী
আরও জানুনঃ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
তৎপুরুষ সমাস চেনার সহজ উপায়
যে সমাসের ব্যাস বাক্যে প্রথম পদের সাথে বিভক্তি (কে,রে,দ্বারা, হতে, র, এর ইত্যাদি) যুক্ত থাকে, যা সমস্তপদের লোপ পায় এবং পরপদের অর্থকে প্রাধান্য দেয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার। যেমন- দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, নঞ, উপপদ এবং অলুক সমাস।
তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণস্বরুপ-
- বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন
- দুঃখকে অতীত = দুঃখাতীত
এখানে বিপদ+কে রয়েছে যা সমস্তপদে কে লুপ্ত হয়েছে।
অব্যয়ীভাব সমাস চেনার সহজ উপায়
যে সমাসের সমস্তপদের পূর্ব পদ অব্যয় হয়,অথচ ব্যাসবাক্যে কোনো অব্যয় থাকে না এবং পূর্ব পদ অর্থাৎ অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন-
- ক্ষুদ্র নদী= উপনদী
- গ্রহের সদৃশ = উপগ্রহ
এক্ষেত্রে প্রতিটা অব্যয়ই একটি নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। এখানে উপ অব্যয়টি ক্ষুদ্র অর্থ প্রকাশ করে।
বহুব্রীহি সমাস চেনার সহজ উপায়
যে সমাসের সমস্তপদের পূর্ব পদ এবং পরপদের কোনোটিরই অর্থ প্রাধান্য পায় না বরং উভয়কে ছাপিয়ে এক ভিন্নধর্মী অর্থ দেয় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। এ সমাস চেনার সহজ উপায় ব্যাসবাক্যে ‘যার’ কথাটি উল্লেখ থাকে। যেমন-
- গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়ে হলুদ
- আশীতে বিষ যার = আশীবিষ
এখানে গা এবং হলুদ কোনোটিরই স্বতন্ত্র অর্থ না বুঝিয়ে গায়ে হলুদকে বোঝাচ্ছে যা একধরনের অনুষ্ঠান।
ইতিকথা
এই ছিল সমাস চেনার সহজ উপায় নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আয়োজন। আশা করি শিক্ষার্থী বন্ধুরা এবং যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দিবে তাদের আমাদের সমাস নিয়ে আলোচনা ভালো লাগবে। আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন।